পুরুষত্বহীনতার লক্ষণ, কারণ ও প্রতিকার
পুরুষত্বহীনতা বা যৌন সমস্যায় পুরুষের শারীরিক অক্ষমতা বা দুর্বলতা সমাজে প্রকট আকার ধারণ করেছে। উঠতি বয়সের যুবকরা এতে হতাশ। ফলে অভিভাবকরা বেশ দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন।
পোস্ট সূচিপত্র
- পুরুষত্বহীনতার জন্য ১০টি ক্ষেত্রে করনীয়
- কর্ম শক্তি লোপ পাওয়া
- যৌন দুর্বলতা
- বিশৃঙ্খল বা এলোমেলো চিন্তা ভাবনা
- মেজাজ পরিবর্তন
- মাংসপেশীর পরিবর্তন
- শরীরে চর্বি বৃদ্ধি
- শরীরে চুল কমে যাওয়া
- হাড় দুর্বল হয়ে যাওয়া
- ঘুমের সমস্যা
- চাকরি ক্ষেত্রে সমস্যা
- পুরুষত্বহীনতার শ্রেণীবিভাগ
- পুরুষত্বহীনতার কারণ
- পুরুষাঙ্গের স্বাভাবিক মাপ
- পুরুষত্বহীনতা নির্ণয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা
- পথ্য ও ব্যবস্থা
- প্রতিরোধে করণীয়
১) কর্ম শক্তি লোপ পাওয়া
২) যৌন দুর্বলতা
যৌন স্প্রিহা হ্রাস পাওয়া এবং যৌন দুর্বলতা একটি প্রধান পুরুষত্বহীনতার লক্ষণ। পুরুষত্বহীনতার অভাবে বীর্য উৎপাদনের পরিমাণও মারাত্মকভাবে কমে যেতে পারে। শুধুমাত্র পুরুষত্বহীনতার ঘার্তিই যৌন স্প্রিহা হ্রাসের একমাত্র কারণ নয়; হৃদরোগ কিংবা ডায়াবেটিসের কারনেও এমনটি হতে পারে। তবে পুরুষত্বহীনতা যৌন আকাঙ্ক্ষা তৈরি, বীর্য উৎপাদনে এবং এগুলোকে সজিব ও সক্রিয় রাখতে ভূমিকা পালন করে। এছাড়া পুরুষাঙ্গের উত্থানে কর্মে প্রধান উদ্দীপক হিসেবে কাজ করে। এই হরমোনটি মস্তিষ্কের রিসেপ্টরগুলোকে নাইট্রিক অক্সাইড (Nitric oxide) উৎপাদনের জন্য উদ্দীপনা তৈরি করে । নাইট্রিক এসিড হল এক ধরনের অনু, যা পুরুষাঙ্গের উত্থানের জন্য চাপ তৈরি করে। মূলত পুরুষত্বহীনতা যৌন আকাঙ্ক্ষা ও যৌনকর্মে প্রধান সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করে এবং পুরুষত্বহীনতা বেশি ঘার্তি হলে বীর্য উৎপাদনে মারাত্মক ঘার্তি সহ যৌন আকাঙ্ক্ষা বেশি মাত্রায় কমে যায় এবং উত্থান সমস্যা সহ নানা ধরনের দুর্বলতা দেখা দেয় ।
৩) বিশৃঙ্খল বা এলোমেলো চিন্তা ভাবনা
পুরুষত্বহীনতার ঘার্তি আপনার মনোযোগ ও স্মৃতিশক্তি কে খতিগ্রস্থ করতে পারে। কখনো এমনটি ঘটতে পারে যে আপানি আপনার দৈনন্দিন কর্মপরিকল্পনা ভুলে যাচ্ছেন কিংবা কাজে পর্যাপ্ত মনোনিবেশ করতে পারছেন না, এগুলো মাত্রাতিরিক্ত পুরুষত্বহীনতার ঘার্তির লক্ষণ। এসব ক্ষেত্রে মানসিক চাপ কমানোর চেষ্টা করুন, কারণ মানসিক চাপ আপনার শরীরে টেস্টোস্টেরন নিঃসরণ এর মাত্রা কমিয়ে দেয়। ম্যাডিটেশন বা ধ্যান, যোগব্যায়াম,
শারীরিক ব্যায়াম কিংবা ম্যাসেজ আপনার মানসিক চাপ কমাতে এবং টেস্টোস্টেরনের স্বাভাবিক মাত্রা ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করতে পারে।
৪) মেজাজ পরিবর্তন
পুরুষত্বহীনতার ঘার্তি আপনাকে অল্পবিস্তর কিংবা মারাত্মক বিষণ্নতায় ভোগাতে পারে। আপনার ব্যক্তিত্বের বা স্বভাবগত পরিবর্তন আপানি নিজেই লক্ষ্য করতে পারেন, যেমন-কোন কিছুই আপনাকে সুখানুভূতি দেবে না কিংবা যে সবকাজ পূর্বে আপনাকে আনন্দিত করত তা করার ব্যাপারে আপানি মোটেই আগ্রহ অনুভব করবেন না।তবে পুরুষত্বহীনতার ঘার্তি পূরূণহলেই, কর্মে স্বাভাবিক অনুপ্রেরণা ফেরত আসে।
৫) মাংসপেশীর পরিবর্তন
যেহেতু টেস্টোস্টেরন মাংসপেশী বৃদ্ধিতে সহায়তা করে, তাই পুরুষত্বহীনতার ঘার্তি হলে আপনার মাংসপেশির গঠন নষ্ট হতে পারে এবং ক্ষমতা হ্রাস পেতে পারে। নিয়মিত ব্যায়াম করুন, এতে আপনার টেস্টোস্টেরনের স্বাভাবিক মাত্রা ফেরত আসবে। তবে এমনভাবে ব্যায়াম করুন যেন আপনার শরীরের পেশীগুলোর একটি বড় অংশ এর অন্তর্ভুক্ত হয়, প্রয়োজনে ভার উত্তোলন এর মতো ব্যায়াম করতে পারেন ।
৬) শরীরে চর্বি বৃদ্ধি
পুরুষত্বহীনতার ঘার্তি শুধু মাংসপেশীই কমিয়ে দেয় না, শরীরে চর্বিও বৃদ্ধি করে, কারণ খাবার থেকে আপানি যে শক্তির যোগান পান তা যদি মাংসপেশি গঠনে কাজ না করে তবে চর্বি হিসেবে শরীরে জমা হয়। স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহন করুন এবং ব্যায়াম করুন। ডায়েটিং/ ডায়েট কন্ট্রোল করুন, এতে আপনার চর্বি এবং ওজন দুটোই কমবে, তবে চর্বি কমার সাথে সাথে আপনার শরীরে পুরুষত্বহীনতা মাত্রা বাড়তে থাকবে যা আপনার পুরনো মাংশপেশী ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করবে।
৭) শরীরে চুল কমে যাওয়া
পুরুষত্বহীনতার ঘার্তির কারণে আপনার শরীরের বিভিন্ন স্থানে চুল কমে যেতে পারে তবে মাথার চুলের ক্ষেত্রে এমনটি ঘটে না ।
৮) হাড় দুর্বল হয়ে যাওয়া
পুরুষত্বহীনতার ঘার্তি হাড় ক্ষয়ের সাথে জড়িত। সবল হাড় ফিরে পেতে ধূমপান ও মদ বর্জন করুন, নিয়মিত ব্যায়াম করুন । প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ মত ওষুধ সেবন করুন।
৯) ঘুমের সমস্যা
শরীরে পুরুষত্বহীনতার ঘার্তি দেখা দিলে আপানি অনিদ্রা ও অস্থিরতায় ভুগতে পারেন। এই সমস্যা সমাধানে ঘুমানোর ক্ষেত্রে নিয়মানুবর্তী হন, সর্বদা একই সময়ে ঘুমাতে যান এবং জেগে ওঠার চেষ্টা করুন, এমনকি ছুটির দিনেও । শয়ন কক্ষ সর্বদা সাচ্ছন্দময় শান্ত, অন্ধকারাছন্ন রাখুন যেন ঘুমের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি হয়।
১০) চাকরি ক্ষেত্রে সমস্যা
পুরুষত্বহীনতার ঘার্তি হলে যে সব সমস্যাগুলো দেখা দেয় তার সামস্টিক প্রভাব আপনার কর্মজীবনকে খতিগ্রস্থ করতে পারে । সুতরাং যদি আপনার সাংসারিক ও চাকরিজীবন খুব খারাপ অবস্থার মধ্য দিয়ে যায়, তবে মেডিক্যাল চেক-আপ এর মাধ্যমে এর কারণ খুঁজে পাবার চেষ্টা করুন।
আরো পড়ুন: প্রাকৃতিক উপায়ে চুলের যত্ন - চুলের যত্নে হেয়ার প্যাক
পুরুষত্বহীনতার শ্রেণীবিভাগ
পুরুষত্বহীনতা, এটি পুরুষের যৌনকার্যে অক্ষমতাকে বুঝায় । পুরুষত্বহীনতাকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়-
- ইরেকশন ফেইলিউর: পুরুষ লিঙ্গের উত্থানে ব্যর্থতা ।
- পোনিট্রেশন ফেইলিউর: লিঙ্গের যোনিদ্বার ছেদনে ব্যর্থতা।
- প্রি-ম্যাচুর ইজাকুলেশন: সহবাসে দ্রুত বীর্য-স্খলন তথা স্থায়ীত্বের অভাব ।
পুরুষত্বহীনতার কারণ
- বয়সের পার্থক্য
- অ্যালার্জির কারণে
- পার্টনারকে অপছন্দ (দেহ-সৌষ্ঠব, ত্বক ও মুখশ্রী)
- দুশ্চিন্তা, টেনশন ও অবসাদ
- ডায়াবেটিস
- যৌনবাহিত রোগ (সিফিলিস, গনোরিয়া)
- রক্তে সেক্স-হরমোনের ভারসাম্যহীনতা।
- যৌনরোগ বা এইডস-ভীতি
- নারীর ত্রুটিপূর্ণ যৌনাসন
- সেক্স-এডুকেশন এর অভাব
যুবকরা হাতুড়ে ডাক্তারের কাছে গিয়ে স্বেচ্ছায় বিভিন্ন হরমোন ইনজেকশন, যৌন উত্তেজনামূলক ওষুধ অথবা কবিরাজের কাছে গিয়ে অকার্যকর ওষুধ সেবন করে। এটি মোটেই কাম্য নয়। এর পার্শ্ব-ক্রিয়ায় শেষ পর্যন্ত সত্যিকারভাবে পুরুষত্বহীনতার আশংকা দেখা দিয়ে রোগীর শুক্রাণুর সংখ্যার পরিমাণ হ্রাস হতে হতে মৃত শুক্রকিটে পরিণত হয়ে পুরুষবন্ধাত্ব হয়।
পুরুষাঙ্গের স্বাভাবিক মাপ
সম্প্রতি এক গবেষণায় পুরুষাঙ্গের স্বাভাবিক আকার কত, তা জানার জন্য অনুসন্ধান করা হয়। এতে অন্তর্ভুক্ত করা হয় ১৫ হাজার পুরুষকে। গবেষণাটি করেছে লন্ডনের কিংস কলেজ ও যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল হেলথকেয়ার সার্ভিসেস (এনএইচএস) ট্রাস্ট। এ গবেষণায় বহু পুরুষের পুরুষাঙ্গের আকার নিয়ে সংশয় দূর হবে বলে মনে করছেন তারা। এক গবেষণায় জানা যায়, পুরুষাঙ্গ স্বাভাবিক অবস্থায় গড়ে ৩.৬ ইঞ্চি আকারের থাকে। তবে তা টানলে তা গড়ে ৫.২ ইঞ্চিতে দাঁড়ায়। এ ছাড়াও এর পরিধি হয় ৩.৭ ইঞ্চি। গবেষকরা জানিয়েছেন, উত্থিত হলে তার আকার পরিবর্তিত হয়ে দৈর্ঘ্য দাঁড়ায় ৫.১ ইঞ্চি। সে সময় এর পরিধি দাঁড়ায় ৪.৫ ইঞ্চি। এ গবেষণার জন্য বহু জাতি ও ভিন্ন বয়সের পুরুষের পুরুষাঙ্গের মাপ নেয়া হয়। তারপর তাদের মাপের গড় হিসাবে এটি পাওয়া যায় ।
পুরুষত্বহীনতা নির্ণয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা
- R/E M/E (Urine Test)
- Blood group test.
- Semen Analysis.
- Serum Testosterone test.
- Whole Abdomen.
পথ্য ও ব্যবস্থা
কাঁচা পেঁয়াজ ও রসুন, গরুর মাংস ও অতিরিক্ত টক, ঝাল ও গুরুপাক আহার নিষেধ। তিন দুধ ও পুষ্টিকর খাদ্য সেব্য। সর্বদা প্রফুল্ল মন ও নিয়মতান্ত্রিক বিশ্রাম। অতিরিক্ত পরিশ্রম ও ভারী কাজ ক করা উচিত নয়।
আরো পড়ুন: কি খেলে পাতলা পায়খানা বন্ধ হয়
প্রতিরোধে করণীয়
- পান, সাদাপাতা, জর্দা, গুল, বিড়ি, সিগারেট ও মদজাতীয় দ্রব্য ত্যাগ অধিকাংশ পুরুষত্বহীনতার সমস্যা রোধ করা যায় ৷
- অতিরিক্তভাবে কম্পিউটার, টেলিভিশন ও স্কিনটাস মোবাইল দেখা থেকে স্বাস্থ্যকে রক্ষা করুন।
- খাদ্যতালিকায় নিয়মিত টাটকা ফল ও শাকসবজি জাতীয় খাবার রাখুন এবং যৌন উত্তেজনামূলক খাবার থেকে বিরত থাকুন ।
- পুরুষত্বহীনতায় স্বাস্থ্যহীনতা দুই সপ্তাহের বেশি স্থায়ী হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। পুরুষত্বহীনতায় স্বাস্থ্যহীনতা অনেকাংশেই প্রতিরোধযোগ্য। প্রয়োজন শুধু জনসচেতনাবোধ ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url